ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

রোজায় দেহের পুষ্টি  

প্রকাশিত : ১৯:০১, ১৯ মে ২০১৯

সিয়াম বা রোজার মাধ্যমে মানুষ আত্মিক, শারীরিক ও সামাজিক উন্নতি লাভ করে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান এক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা পালন করছে।

এ সিয়াম পালনে আমাদের খাদ্যভাসে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়। একজন রোজাদার আল্লাহর নির্দেশে সারাদিন পানাহার থেকে সিয়াম পালন করেন।

সিয়াম পালনকালে যাতে আমাদের শরীর ঠিক থাকে, সুস্থতার সঙ্গে যাতে আমরা রোজা রাখতে পারি, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে একুশে টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ ডায়েটিশায়ান ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন।

একুশে টিভি:  রমজানে আমরা কিভাবে দেহের পুষ্টি ঠিক রাখতে পারি?

ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন:  প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করেই আমাদের রোজা রাখতে হচ্ছে। সুস্থ ও সুন্দরভাবে ইবাদতের মাধ্যমে রোজা রাখতে চাই, সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যালেন্সডাইয়েট বা ব্যালেন্স নিউট্রিশন ঠিক রাখা জরুরি।

এক্ষেত্রে পানির পরিমাণের দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। দেহের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি ফলের রস, মিনারেল ওয়াটারসহ সুপেয় পানি পান করা যেতে পারে। এতে করে আমাদের শরীর রিহাইড্রেট করবে, শক্তি জোগাবে।

একুশে টিভি: ইফতারে অনেক খাবারকে মুখরোচক করতে তেল বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে কি বলেবেন?

ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন:  সারাদিন আমরা অভুক্ত থেকে রোজা থাকছি। তাই, খাবারটা অবশ্যই ‍সুস্বাদু হওয়া জরুরি। শুধু তেল ও ভাজা পোড়া দিয়েই যে তা করা যায়, তা নয়।

খাবারকে মুখরোচক করতে স্পাইসেস বা হার্ব ব্যবহার করতে পারি। তেলের পরিমাণ কমিয়ে লেবু, ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার আগুনে পুড়িয়েও বিভিন্ন খাবার তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, কুকিং প্রসেসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একুশে টিভি : উত্তম ইফতারে কি ধরণের খাবার থাকতে পারে?

ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন:  সারাদিন রোজা থাকার কারণে আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই যে খাবারগুলো শরীরে শক্তি বাড়ায় এমন খাবার খাওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে, ছোলা, হালিম, খেজুর সবচেয়ে আদর্শ খাবার। তবে, অবশ্যই তেলের পরিমাণ কম হওয়া জরুরি।

ছোলায় প্রচুর ফাইবার আছে। হালিম অত্যন্ত মুখরোচক একটি খাবার। তবে, সেটি বাজারের না হয়ে বাসায় তৈরি হওয়াই ভালো। খেজুরে পটাশিয়াম আছে। যা আমাদের শরীরের সেলগুলোকে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়া, খেজুরে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ আছে। যা আমাদের ক্যালরিকে দ্রুত সাপ্লাই করছে। তাই, সেহরী ও ইফতারিতে খেজুর আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারি। 

একুশে টিভি : গর্ভবতী নারীদের ইফতার ও সেহরি কি রকম হতে পারে?

ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন: এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম লক্ষ্য রাখতে হবে তিনি কোন ট্রাইমিস্টারে আছেন? প্রেগনেনসিকে তিন মাস করে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়ে থাকে। এ স্তর অনুযায়ী তার ইফতার ও সেহরির খাবার তালিকা হওয়া উচিৎ।

একজন গর্ভবতী নারীকে আমরা সেকেন্ড ট্রাইমিস্টার পর্যন্ত রোজা রাখতে দেই। কিন্তু যে সময়টাতে পেটের শিশু দ্রুত বেড়ে ওঠে, মাংস বৃদ্ধি, ব্রেন, হারের ডেভলপমেন্ট হয় অর্থাৎ শেষের তিনমাস আমরা রোজা না রাখতে পরামর্শ দেই। আর যদি কোন নারী রেখেই থাকেন, সেক্ষেত্রে তাকে দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতেই হবে।

এক্ষেত্রে প্রথম ট্রাইমিস্টার থেকে প্রতিদিন একটি কুসুম ছাড়া, আরেকটি কুসুমসহ দুটি করে ডিম, নিম্নে দুগ্লাস দুধ, এক কাপ টকদই এবং ছয় থেকে সাত টুকরো মাছ-মাংস খেতে হবে।

আয়রন, ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে পারলে তাহলে রোজা রাখলে কোন সমস্যা নেই।

অনেক নারীর গর্ভকালীন ডায়বেটিকস হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হাইপো অথবা হাইপার গ্লাইসিম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থাৎ, ব্লাড সুগার কমে যাওয়া আবার কখনো বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে, ইফতারের সময় অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোড্রেট যুক্ত খাবার যেমন, লাল চালের ভাত, আপেল, খেজুর প্রভূতি খাওয়া যেতে পারে।

একুশে টিভি : যার উচ্চ রক্তচাপ আছে, তার ইফতার ও সেহরি কি ধরণের হওয়া উচিৎ?

ডা. চৌধুরী তাসনীম হাসিন: এসমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, ব্লাড প্রেসার যাতে না বাড়তে পারে, সে জন্য অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত-পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এতে করে রক্তের সোডিয়ামকে এটি সাপপেস করে রাখবে। যেমন তিনি ডাবের পানি, লেবু দিয়ে শরবত খেতে পারেন।

যদি ডায়বেটিকস না থাকে তাহলে কলা খেতে পারেন। এমনকি গরুর গোস্তও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই চর্বিমুক্ত হতে হবে।

 

 

আই//  এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি